বিজ্ঞানের ভাষায় জীবনের বিকাশের শেষ স্টেপ



 পরমাণুর থেকেও ছোট্ট একটি বিন্দুর মধ্যে হঠাৎই বিকশিত হওয়া এবং সেটা সেকেন্ডের হাজারভাগের একভাগ সময়ের মধ্যেই বিস্ফোরিত হওয়ার মাধ্যমেই এই ব্রহ্মাণ্ড এবং সেই সাথে "সময়, কাল, স্পেস এবং বিভিন্ন অস্তিত্বের আবির্ভাব " আমরা আগের পর্বে আলোচনা করেছি। এখন এই ব্রহ্মাণ্ডের সব থেকে লাকি এবং "রকি প্লানেট" পৃথিবীর সৃষ্টি এবং সেখানে জীবনের বিকাশ আলোচনা করবো। অবশ্যই সেটা বিজ্ঞানের ভাষায়।

( অনুরোধ- ধর্মকে ধর্মের স্থানে রেখে বিজ্ঞানের কথাগুলো বলি। ধর্মকে অস্বীকার করার বা বাতিল করার কোনোরকম সাহস নেই আমার)

আজ থেকে প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন বছর আগে থেকে শুরু করি চলুন। যখন পৃথিবীর নিজেরাই প্রথম অস্তিত্বের শুরুটা হচ্ছিল। তখন পৃথিবীর ঐ প্রথম অস্তিত্বের অবস্থান আজকের থেকে কিছুটা সূর্যের কাছাকাছি ছিল। এবং ঐসময় পৃথিবীর অভন্তরিণ তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশী ছিল, যেটা আগুনের একটা গোলক বলে ধরে নিতে পারেন। শুধু তাই নয়, ঐ সময় পৃথিবীর বুকে ক্রমাগত ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন দিক থেকে ছুটে আসা লাগাতার বিভিন্ন আকৃতির "এস্ট্রোয়েডের" বৃষ্টি চলছিলো, যেটা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ আকৃতির বৃদ্ধির কাজটাও করছিলো। বেশ একটা লম্বা সময় ধরে ছোট বড় এস্ট্রোয়েডের বৃষ্টি পৃথিবীর "প্রথম অস্তিত্বে" আঘাত করছিলো। এক সময় ঐ উত্তপ্ত গোলকটি, যেটা আমরা সূর্যের একটি গ্রহ বলে থাকি, সেই গ্রহের প্রথম পূর্ণ রূপ নেয়। অর্থাৎ সূর্যের একটি গ্রহে পরিণত হয় আমাদের প্রথমের সেই উত্তপ্ত পৃথিবীটি। তবে তখনও এই নতুন গ্রহটিতে জীবন তো দূরে থাক, জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেসমস্ত জিনিসগুলোর দরকার, তা তখনও তৈরি হয়নি অথবা আসেনি। সম্পূর্ণ উত্তপ্ত একটি গ্রহ তখন আমাদের ঐ প্রথম পৃথিবী। যেটা ঐ অবস্থায় নিঃসঙ্গ ভাবে একাই একাই সূর্যেকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল।

এই সময় পৃথিবীর সাথে ঘটে একটি একই সাথে সব থেকে ভয়ংকর এবং পরে এই আমাদের বর্তমান পৃথিবীর জীবনের অস্তিত্বকে সাপোর্ট করবে সে রকম একটি ঘটনা। প্রায় মঙ্গল গ্রহের সমান একটি গ্রহ অথবা উল্কা (থিয়া) আমাদের পৃথিবীর সাথে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা খায়। পৃথিবীর যেই অংশে এই মহা প্রলয় বা ঐ ব্রহ্মাণ্ড থেকে ভীষণ দ্রুত গতিতে ছুটে আশা বিশাল অস্তিত্বটি ধাক্কা খায়, পৃথিবীর সেই অংশটি মুহূর্তের মধ্যেই টুকরো টুকরো হয়ে পৃথিবীর উপরের দিকে শূন্যে ছিটকে চলে যায়। যে হেতু পৃথিবী নিজেই একটি গ্রহতে তার আগেই রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল, তাই এর সাথে সাথে তার একটি " গ্রাভাটিরও " জন্ম হয়েছিল। যেটাকে আমরা মহাকর্ষণ শক্তি বলেই চিনি। সেই শক্তির কারণে পৃথিবীর বুক চিড়ে ঐ আগন্তক দানবটি আঘাত করে যাবার সময় পৃথিবীর ঐ অংশের যে খণ্ড খণ্ড টুকরোগুলো মহাশূন্যে ছুটে গিয়েছিল, সেগুলোকে পৃথিবী তার গ্রাভিটির ফোর্সের টানে তার বলয়ে ভেসে বেড়াতে বাধ্য করে। আর এই ভাসমান পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশগুলো এক বছর ধরে একটি স্থানে একত্রিত হতে শুরু করে। আর এই ঘটনাটা (আমি বলবো, আমাদের জন্য উত্তম ঘটনা) পৃথিবীর নির্দিষ্ট দূরত্বেই ঘটেছিল। এক সময় পৃথিবীর থেকে অনেক গুণ আকারে ছোট প্রথিবীর প্রথম কোন সঙ্গী বা সাথীর জন্ম নেয়। যেটার আকৃতিটাও পৃথিবীর মতই গোল এবং পৃথিবীর একরকম প্রেমের টানে (গ্রাভিটির কারণে) পৃথিবীর কক্ষপথে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। আমি জানি "থিয়া" নামের সেই গ্রহটির ধাক্কার কারণে সৃষ্টি হওয়া পৃথিবীর এই প্রেমিক অথবা প্রেমিকাকে আপনারা এতক্ষণে চিনে ফেলেছেন। রাতের আকাশে অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে যে আমাদের দৃষ্টিতে ধরা দেয় সেই চাঁদটাকে।

যদি বর্তমান বাস্তবসম্মত গবেষণা থেকে বলি, তাহলে বলতেই হচ্ছে, রাতের আকাশের শুধু সৌন্দর্যের জন্যই চাঁদ কাজ করে না। সে একই সাথে পৃথিবীকে তার নিজ অক্ষে থেকে শান্ত ভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণের জন্য একমাত্র কারণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা গেল পৃথিবী আর সূর্য সম্পর্কিত চাঁদের ভূমিকার কথা।

"থিয়া" নামের ঐ উল্কা অথবা গ্রহের ধাক্কা থেকে জন্ম নেওয়া চাঁদ পরে যখন পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব শুরু হবে এবং সেটা বিকশত হতে হতে মানুষ পর্যন্ত আসবে, তার পরেও চাঁদ সেই মানুষ সহ সমস্ত জীবনের অস্তিত্বকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার কাজ করবে বা বর্তমানের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় এখনও করছে সে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের রক্ষার ক্ষেত্রে। ( "যদি চাঁদ না থাকতো?" এই শিরোনামের আমার এর পূর্বের পর্বে উল্লেখ করেছি, যেখানে আপনি জানতে পারবেন পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাঁদের কতটা ভূমিকা আছে )

আবার ফিরে যাই চাঁদ সৃষ্টির আগে, "থিয়া" নামক গ্রহের সাথে পৃথিবীর প্রচণ্ড জোরে ধাক্কার ফলে তো চাঁদের জন্ম নিল। কিন্তু তখনও পৃথিবীর অবস্থা অনেকটাই খারাপ। এই সময় পৃথিবীর তাপমাত্রা ভীষণরকম উত্তপ্ত ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই তাপমাত্রার পরিবর্তন আসতে থাকে। কমতে থাকে। পৃথিবী ঠান্ডা হতে শুরু করে। ঠিক এই সময়ই পৃথিবীর বুকে একটি স্থির ভূমণ্ডল আকৃতি পায়।

এর পর আজ থেকে প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীর বুকে আবারও দুর্যোগ নেমে আসে। ফের আরও একবার উল্কার বৃষ্টি হতে শুরু করে। কিন্তু এই উল্কার (Meteor) বৃষ্টির সময় সেই উল্কা গুলো সাথে পৃথিবীর জন্য একটি উপহার সাথে এনেছিল। ঐ সমস্ত উল্কাপিন্ডের মধ্যে জমে থাকা বরফের "ক্রিস্টাল" ছিল, যেই ক্রিস্টাল গুলো একত্রে পৃথিবীর বুকে জল বা পানির বড় বড় সমুদ্রের সৃষ্টি করেছিল। এবং একই সাথে ঐ উল্কাপিন্ডের সাথে পৃথিবীর বায়ু মণ্ডলের জন্য এসেছিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান " নাইট্রোজেন গ্যাস"।

কিন্তু এর পরেও পৃথিবীতে জীবন শুরুর মতো তখনও পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। কারণ তখনও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঐ সমস্ত গ্যাসে ভরা ছিল। পাশাপাশি সমস্ত পৃথিবী তখন জলমগ্ন।

পৃথিবীর উপর এর পরেও গজব কাটেনি। আজ থেকে ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে আবার পৃথিবীর বুকে ধেয়ে আসে উল্কার বৃষ্টি। কিন্তু এই বারেও এই সমস্ত উল্কা (Meteor) গুলো তাদের সাথে এনেছিল পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি উপদান "খনিজ বা মিনারেলস "। এনেছিল গুরুত্বপূর্ণ কার্বন, প্রোটিন এবং এমনিও অ্যাসিড। যেগুলো পরে সমুদ্রের নিচে প্রথম জীবনের অস্তিত্ব পেতে সাহায্য করবে।

তখন সমুদ্রের তাপমাত্রা প্রচণ্ড রকম ঠান্ডা ছিল এবং সূর্যের কিরণটাও তখন সমুদ্রের খুব একটা গভীর পর্যন্ত পৌঁছতে পারতো না। কিন্ত সমুদ্রের নীচে তখনও কিছু জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ছিল, যেগুলো সমুদ্রের পানি বা জলকে গরম করছিল। এভাবেই কেটে যায় 0.3 বিলিয়ন বছর।

আজ থেকে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে, ঠিক এই সময় সমুদ্রের পানির নিচে প্রথম ঐ সমস্ত বিভিন্ন রকমের মিনারেলস আর কেমিক্যাল মিলে খুবই ক্ষুদ্র এককোষী জীবের সৃষ্টি করে। যেটাকে আমরা ব্যাকটেরিয়া (Bacteria) বলি। এই ব্যাকটোরিয়া গুলো সমুদ্রের নিচে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এবং ছেয়ে যায় সমুদ্রের সমস্ত অঞ্চল জুড়ে।

ঠিক এই সময় এই এক কোশী জীবগুলো একত্রিত হয়ে "সমুদ্রের পাথরে আকারের মতো" অস্তিত্ব নিতে শুরু করে। এই ব্যাকটোরিয়ার স্তূপ গুলো সূর্যের আলোকে খাবার হিসেবে ব্যবহার করে এবং বর্জ্য হিসেবে এক ধরনের গ্যাস রিলিজ করতে শুরু করে।
কি? কিছু ধরতে পারছেন এখানে? হ্যাঁ এই প্রক্রিয়াকেই আমরা বা খুব ছোট বাচ্চারাও জানি যে এটা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া। আর এই নির্গত গ্যাসই জীবনের বেঁচে থাকার জন্য সর্ব প্রথম উপদান অক্সিজেন। পৃথিবীতে জীবনের জন্য এইস মস্ত ব্যাকটোরিয়া সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি শুরু করে দিয়েছিল। যেটা ছাড়া পৃথিবীতে পরবর্তীতে আসা জীব কোন ভাবেই টিকে থাকতে পারবে না। সেই অক্সিজেন তৈরির কাজটা চালিয়ে যাচ্ছিল। একটা দীর্ঘ সময় ধরে (প্রায় দুই বিলিয়ন বছর ধরে চলে) এই সমস্ত ব্যাক্টোরিয়া পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি করতে থাকে।

এদিকে পৃথিবীতে পৃথিবীর স্তরে তখনও কোনো বড় দ্বীপের সৃষ্টি হয়নি। যাও ছিল তা বিচ্ছিন্ন আকারে ছোট ছোট দ্বীপ। কিন্তু এই সময় পৃথিবীর মধ্যেকার "ক্রাস্টের" পরিবর্তন হতে থাকে, যার ফলে পৃথিবী বেশ কিছু 'টেকটনিক প্লেটে' ভাগ হয়ে যায়। ছোট ছোট দ্বীপগুলোর মুভমেন্টের কারণে একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে তৈরি হয় প্রথম " সুপার কন্টিনেন্ট "। যার নাম ছিল ' রোডিনিয়া (RODINIA)। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুর পরিবর্তন চলছে। এই সময় পৃথিবীর সময় সীমা ছিল আঠারো ঘণ্টা।
এ যেন একটা কোন মহা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য।

আজ থেকে প্রায় ৭৫ কোটি বছর আগে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ আরও একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। পৃথিবীর মধ্যেকার " সুপার কন্টিনেন্ট-টি " দুটি ভাগে ভাগ হয় যায় এবং পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে জেগে ওঠে আগ্নেয়গিরি গুলো। মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে তাদের জ্বালা মুখ থেকে বের হয়ে আসে উত্তপ্ত লাভা। আর সেই লাভার কারণে বায়ুমণ্ডলে মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায় কার্বনডাই অক্সাইড। সমস্ত আকাশ জুড়ে তৈরি হয় কার্বনডাই অক্সাইডের মেঘ। আর এই মেঘ থেকে পৃথিবীর বুকে ঝড়ে পড়তে থাকে অ্যাসিড বৃষ্টি। ক্রমাগত এই অ্যাসিড বৃষ্টির কারণে পৃথিবীর স্তরের উপরের অংশে ভারী "কার্বনের লেয়ার" তৈরি হতে থাকে। এই অ্যাসিড বৃষ্টির কারণে বায়ু মণ্ডলের কার্বনডাই অক্সাইডের মাত্রাও কমতে থাকে। যার ফলে বায়ুমণ্ডল সূর্যের তাপকে আর ধরে রাখতে পারতো না। যে কারণে পৃথিবীর বুকে প্রথম জন্ম নেয় "আইস এজ" বা হিমযুগ। পৃথিবীর প্রথম এই হিমযুগ একটা লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে।

কিন্তু সময়ের সাথে আবার বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাই অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যার ফলে আবার পৃথিবীর তাপমাত্রার বৃদ্ধি ঘটে। জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করে।
এ তো গেলো সমুদ্রের উপরি ভাগের গল্প। কিন্তু ওরা কেমন আছে? যারা এই "আইস এজের" আগেই সমুদ্রের নিচে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল, সেই এক কোষী জীবগুলোর?

সময় এগিয়ে আসছে মানুষ সভ্যতার জন্ম দেবার জন্য। আজ থেকে প্রায় ৫৪ কোটি বছর আগে সমুদ্রের নীচের ঐ এককোষী ব্যাক্টোরিয়ারা ততদিনে সমুদ্রের নিচে একটি নতুন জগতের সৃষ্টি করে ফেলেছে। অক্সিজেনের কারণে ঐ এককোষী জীবগুলো বিভিন্ন আকৃতির এবং প্রজাতির বহুকোষী জীবে পরিণত হয়েছে।

এই সময় সমুদ্রের নিচে ছোট ছোট গাছ, ছোট ছোট আকারের জীব সেই সাথে বড় আকৃতির একটি প্রণিও ছিল, যার নাম "এলিমোরাকারিস"। এরাও ঐ সময় এককোষী জীব থেকে বিকশিত হয়েছে। তার সাথে ছিল মাত্র পাঁচ সেন্টিমিটারের একটি প্রাণি "পিকায়া "। কিন্তু এই "পিকায়া" অন্যদের থেকে একটু ভিন্নভাবে বিকশিত হয়েছিল। কারণ এই পিকায়ার মধ্যেই এমন একটি জিনিস ছিল যেটা আমাদের অনেক পড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবার এবং দেহের কাঠামোকে একটি অন্যরকম বৈশিষ্ট্য দেবে। হ্যা ঠিকই ধরেছেন। এই পিকায়ার ভিতরেই ছিল প্রথম " সেই মেরুদণ্ডের মতো অস্তিত্ব "।

আজ থেকে প্রায় ৪৬ বছর পূর্বে যে সমস্ত জীব ছিল তার সব গুলোই পানির নিচে বসবাস করতো। যদিও এরই মধ্যেই পৃথিবীর সেই সুপার কন্টিনেন্ট গুলো বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কিন্তু তখনও এই ভু পৃষ্ঠে গাছপালা জন্ম হতে পারেনি। যার অন্যতম কারণ সূর্য থেকে আসা অতি বেগুনি রশ্মি। তার পরেও এই সময় পৃথিবীর বায়ু মণ্ডলেও একটি প্রক্রিয়া চলছিল। একটি লেয়ারের তৈরি হচ্ছিল। যেটাকে আমরা ওজন লেয়ার বলি। বায়ু মণ্ডলের অক্সিজেন এই লেয়ার তৈরি করে। আর এই লেয়ার তৈরি হয়ে যাবার কারণে সূর্যের সেই অতি বেগুনি রশ্মিকে বাধা প্রদান করে। যেটা আজ পর্যন্ত আমাদেরকে সূর্যের এই ক্ষতিকারক বেগুনি রশ্মীর হাত থেকে রক্ষা করেই চলেছে। ওজন লেয়ার।

ওজন লেয়ার এবং বেগুনি রশ্মির ঐ সময়কার পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠে সময়ের সাথে ছোট ছোট শৈবালের জন্ম হতে থাকে। যেটা পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়া প্রথম উদ্ভিদ বলে আমরা ধরে নিতে পারি।

এই ছোট ছোট উদ্ভিদের সাজে যখন পৃথিবীর উপরিভাগের পরিবেশ চেঞ্জ হচ্ছে তখন পানির নিচে থাকা একটি প্রজাতি যেটা দুটি সামনের ছোট ডানা যুক্ত মাছের মত এবং যার নাম "টিকটালিক"। এই টিকটালিক সামনের ডানার মতো জিনিসটাকে পা এর মত ব্যবহার করে পানির নিচে থেকে প্রথম ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে আসে এবং সময় কাটাতে শুরু করে। যার ফলে বিভিন্ন প্রভাবে এদের শারীরিক গঠনের পরিবর্তন আসতে শুরু করে। প্রায় ১.৫ কোটি বছর ধরে এরা বিকশিত হতে থাকে এবং এক সময় এরা সম্পূর্ণ ভাবে পানি ছেড়ে মাটিতে বসবাস করা শুরু করে। ভূমিতে বসবাস করা বিকশিত এই প্রাণীটি এখন অন্যরকম। যাকে "ট্রেট্রাপস" বলে ডাকা হয়, সেই প্রজাতিতে বিকশিত হয়েছিল।

৩৬ কোটি বছর আগে এই ট্রেট্রাপোস সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয়ে গিয়েছিল। এরাই ধীরে ধীরে ডাইনোসর, পাখি, এবং এবং বিভিন্ন প্রজাতির সহ আরও পরে মানুষে বিকশিত হবে।

যখন বিকশিত হচ্ছিল ঐ প্রাণী গুলো তখন সময়ের সাথে পৃথিবীর তাপমাত্রার আবার বৃদ্ধি ঘটে। আগ্নেয়গিরি গুলো আরও একবার বিস্ফোরিত হতে শুরু করে। একটা ভয়ংকর পরিস্থিতির জন্ম হয় আবার এই পৃথিবীর বুকে। এই সময় প্রচণ্ড তাপে পৃথিবীর উপরি ভাগের প্রায় সমস্ত গাছ পালা শুকিয় মরে যেতে শুরু করে। যে কারণে পৃথিবীর প্রায় পাঁচ ভাগ বাদে বাকি ৯৫ ভাগ প্রাণী মৃত্যুবরণ করে। এই পাঁচ পার্সেন্ট ঐ খড়ার পরিস্থিতিতে যা পেত তাই খেতে শুরু করে। এবং অতিরিক্ত তাপ থেকে বাঁচার জন্য মাটির নিচে বসবাস করতে শুরু করে।

RITON

সম্পাদক (শব্দনগর), লেখক, আবৃত্তিকার, বিশ্লেষক

Post a Comment

COMMENTS

Previous Post Next Post