বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকাশে এখন এমন দুইশ স্যাটেলাইট পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে, যেগুলো আবর্জনায় পরিণত হয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে 'টাইম বোমা'র মত বিস্ফোরিত হতে কিংবা অন্য স্যাটেলাইটের উপর আছড়ে পড়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে বসতে পারে।
এসব 'আবর্জনা' আছড়ে পড়ে ক্ষতি করে বসতে পারে এমন সব কর্মক্ষম স্যাটেলাইটকে যেগুলো জিপিএস এবং আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিস্ফোরণ কিংবা ভালো স্যাটেলাইটের সংঘর্ষ- সে যাই হোক না কেন, উভয় ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটগুলো হাজার হাজার টুকরোতে পরিণত হয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা মানব সভ্যতার বিরাট বিপদের কারণ ঘটাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এসব ঝুঁকিপূর্ণ 'আবর্জনা'কে 'সুপার স্প্রেডার' বলে বর্ণনা করছেন বিজ্ঞানীরা যেগুলোকে নজরে রাখার জন্য একটি 'প্রায় রিয়েল টাইম' মানচিত্র তৈরি করেছেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মোরিবাহ জাহ নামে একজন প্রফেসর ও তার সহকর্মীরা।
মোরিবাহ জাহ এক ভিডিও বার্তায় অ্যাস্ট্রাগ্রাফ নামের এই মানচিত্র কীভাবে কাজ করে, আর 'সুপার স্প্রেডার'-গুলো বিস্ফোরিত হলে কিংবা সংঘর্ষ ঘটালে কী ঝুঁকি তৈরি হবে মানব সভ্যতায়, সেসব বর্ণনা করেছেন।
বিজ্ঞানী মোরিবাহ জাহ‘র বর্ণনামতে- ‘ আমরা ২৬ হাজারেরও বেশি বস্তুর ওপরে নজর রাখছি, যে গুলোর আকার একেকটা মুঠোফোন থেকে শুরু করে মহাকাশ স্টেশনের মতো।
সম্ভবত তার মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার রয়েছে কর্মক্ষম স্যাটেলাইট, যেগুলো কাজে লাগে এছাড়া বাকি যা আছে সব আবর্জনা। মহাকাশে মানুষের তৈরি যতোগুলো বস্তু আছে এই মানচিত্র সেগুলো অনুসন্ধান করে, যাতে বিজ্ঞানীরা সেগুলো পর্যবেক্ষণ এবং আচরণ সম্পর্কে পূভাবাস দিতে পারেন।
মোরিবাহ জাহ‘র ভাষায়- একে আমি বলি ‘সুপার স্প্রেডার’ ঘটনা বিশাল আকারের রকেটের চুকরোগুলো বহু দশক ধরে ঘুরতে থাকা টুকরোগুলো একেকটা ‘টাইম বোমায়’ তৈরি হয়েছে। আর সেগুলো লাখ লাখ টুকরোতে পরিণত হয়ে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে।
১৯৫০ দশকের পর মহাকাশে আবর্জনার পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে গেছে যা কর্মক্ষম স্যাটেলাইটের জন্য হুমকি হয়ে ওঠতে পারে। অবস্থান, দিকনির্ণয়, সময় নির্ধারণ, অর্থ লেনদেন, আবহাওয়ার শতর্ক বার্তাসহ আরও বিভিন্ন উপাত্ত যেসব স্যাটেলাইট এরকম সেবা দেয়, সেগুলো যে কোন মুহুর্তে এসব আবর্জনার টুকরোর দ্বারা আঘাতের শিকার হতে পারে।
মহাকাশে এসব সম্পদের ক্ষতি হলে মানব সভ্যতা সংকটের মুখোমুখি হবে। সুতরং আমরা আরও বেশি করে মহাকাশ ভিত্তিক এসব বস্তুকে যথাস্থানে রাখতে সচেষ্ট হচ্ছি। এ পর্যন্ত দুইশো ‘সুপার স্প্রেডার’ চিহ্নিত করেছে অ্যাস্ট্রাগ্রাফ মানচিত্রটি। অনিয়ন্ত্রিত রকেটের এসব টুকরোর মালিক অন্তত আলাদা তিনটি দেশ।
এসব দেশ কি রকেটের বড় টুকরোগুলো সরিয়ে নিতে অর্থ থরচ করবে? যেগুলো মাহাকাশে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানব সভ্যতার জন্য সংকট তৈরি করতে পারে। কিন্তু সেটা তারা কেন করবে। অ্যাস্ট্রাগ্রাফ নামের এই মানচিত্রটি সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত। যা জনতার কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ এবং মার্কিন সরকারের তহবিলে তৈরি।