বিখ্যাত হবার গ্যারান্টি না, বরং আমার "নিজস্ব" হোক এই গ্যারান্টি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

আমার শরীরের বয়সের ভাঁজে ন্যুব্জ, কুঁচকে যাওয়া চামড়া। সময়ের থাপ্পড়ে যা কালচে হয়ে গেছে। এটা আমার, পুরোপুরি আমার নিজস্ব। আমার পরনের পোশাক? পুরাতন হলেও ঝকঝকে—সেটাও আমার ব্যক্তিগত। ঠিক তেমনই, আমি যে ভাবে এই শব্দগুলো লিখছি, সেই ভঙ্গিমা, সেই বানান ভুলের মধ্যেও আমার নিজস্ব ভাবনার ছাপ স্পষ্ট। এটা আমার অনুভূতি থেকে উঠে আসা মৌলিক প্রকাশ।  

ফুলের সৌন্দর্য বর্ণনা নয়, বরং ফুল দেখে আমার মনে যে অনুভূতির জন্ম, তার অনন্য উচ্চারণই আমার লেখা। সেটা এলোমেলো হোক, তবুও সেটা একান্তই আমার। কাজী নজরুল বা শেকসপিয়ারের সাহিত্যিক ছোঁয়া হয়তো এখানে নেই। কিন্তু শব্দের অলঙ্করণ এবং অভিজ্ঞতার যে শিক্ষা তাঁদের থেকে পেয়েছি, তা আমার ভেতর বয়ে চলে। তবে যাই বলি বা লিখি, তা আমার কণ্ঠের ভাঁজে, আমার শ্বাসে ব্যক্তিত্বের ছাপ রেখে যায়।  
  
আমাদের সাহিত্যকে নজরুল বা শেকসপিয়ারের তুলনায় না এনে তাদের মানদণ্ডের আলোচনায় আনা উচিত। যেমন গোলাপের কাছে হাসনাহেনার সুবাসের তুলনা অর্থহীন, তেমনি প্রত্যেক লেখার নিজস্ব সৌন্দর্য ও স্বকীয়তার বিচার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই হওয়া উচিত।  

গালিবের সায়ের শুনে যদি আমার অনুভূতির জন্ম হয় এবং সেটা লেখায় প্রকাশ করি, তবে সেই গন্ধ গালিবেরই থাকবে। আমি চাই, আমার লেখা, আমার সৃষ্টি—সবকিছুর গন্ধ যেন একেবারে আমার নিজের হয়। যেন পাঠক শুঁকে বলতে পারে, “এটা রিটনের গন্ধ।”  

আমার সৃষ্টির পরিচয় আমার নামে গাঁথা হোক। মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেও, আমি যেন বলতে পারি—  

“এটাই আমি। এটাই আমার। এটাই আমার নিজস্ব।"

আমার লেখায় তথাকথিত বিখ্যাত "কবি জান্নাতুলের" প্রশংসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নেই। আবার সাহিত্যিক কমল দাসের তাচ্ছিল্য আমাকে বিচলিত করে না। নিজের সৃষ্টি নিজের মতো করে মেলে ধরার আনন্দেই আমার সার্থকতা। এখানেই তো স্রষ্টা এবং সৃষ্টি ‘ইউনিক’ হয়ে ওঠে।  

আমার লক্ষ্য একটাই—নিজের সত্তা, নিজের ভাবনা, নিজের অস্তিত্বকে অনন্য রূপে প্রকাশ করা। এখানে অন্যের ছাপের কোনো স্থান নেই। নিজস্বতাই আমার পরিচয়।

- আল মামুন রিটন
নাটোর সদর, নাটোর 
প্রিয় বাংলাদেশ
Previous Post Next Post

বিজ্ঞাপন