আরেকজনের প্রতি মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ - আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন



হাই! হ্যালো! এই কেমন আছেন আপনি? সালাম, আদাব, নমস্কার, দুঃখিত, সরি, দারুণ, অসাধারণ, ওয়াও।

এই ছোট ছোট শব্দগুলো নিতান্তই শব্দ মনে হলেও এগুলো পরিচিত হোক অথবা অপরিচিত- তাদের মধ্যে আদান প্রদান এক ধরণের মানবিক গুণের উপস্থিতির ঘোষণা দেয়, জানান দেয় একজনের সাথে আরেকজনের সম্পর্কের অনুভূতির নরম আবেগের অস্তিত্বকে। এই শব্দগুলো দিয়েই সূচনা হয় সামাজিক, মানসিক বন্ধনের মত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্বের। এই শব্দ ব্যবহার আমাদের সমস্ত প্রাণীদের থেকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেয় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের, আর সেটা হলো মানুষের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ “মানবিক” বা আন্তরিক মনভাবের। এই শব্দগুলোর ব্যবহার মুখেও হতে পারে হতে পারে চিঠি এবং এস এম এসে লিখেও। কিন্ত এর পিছনের উদ্দেশ্য থাকে একই। একজন আরেকজনের প্রতি মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ- এবং অবশ্যই আন্তরিকতার সব থেকে পবিত্র অনুভূতি।

একটু ভেবে দেখবো কি আমরা এই সময়ে যে সময়ে একজন আরেকজনের সাথে ধাক্কা লেগে চলে গেলেও ফিরে তাকাইনা, বলা হয়ে ওঠেনা বন্ধু বা ভাই অথবা বোন “আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত”। বলা হয়ে ওঠেনা পাশের বাড়ি তো দূরে থাক, পাশের রুমের অসুস্থ স্বজনদের যে – আজ তুমি কেমন আছো? অথবা পথে যেতে যেতে বয়জেষ্ঠ্যদের দেখে মাথাটা একটু নিচু করে নরম সুরে বলা – “আসসালামু আলাইকুম, নমস্কার চাচা, কেমন আছেন আপনি?”

যে সময় ইন্টারনেট আমাদের হাজার মাইল দূরত্বকে দূর করে বাহবা নিচ্ছে সেখানেও এস এম এস, ইমেইল অথবা পোস্টে দেওয়া হয়ে ওঠেনা কারও আন্তরিক প্রশ্নের উত্তর – হাই,,,, হ্যালো,,,,, এই যে ভাইয়া,,,, ।
সিন হয়ে পরে থাকে মৃত শব্দগুলোর লাশের মতোই।

যে যুগে ম্যাসেঞ্জারে সুবিধার জন্য সোস্যাল অন্যান্য এপে, আপনার আন্তরিক পরিচয়কে সম্মুন্নত রাখার জন্য হাজার ডলার খরচ করে সোস্যাল প্লাটফর্ম গুলো তাদের AI ( Artificial intelligence) মাধ্যমে অটোমেটিক উত্তর দেবার অত্যন্ত সহজ পদ্ধতির অপশন রেখেছে, যাতে আপনি না থাকলেও আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার আগে থেকে সেটাপ করা কিছু কমন উত্তরগুলো সাজানোর সুযোগ থাকে, মন্তব্য অপশনের নীচেই আপনার যেনো আঙুল ব্যথা না হয় এজন্য সাজেস্ট রিপ্লে শো করায়, যেটা অটোমেটিক অপরজন পেয়ে খুশি হবে। এর পরেও যখন এই ছোট ছোট প্রশ্ন, শব্দ অথবা অনুভূতিগুলো প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে করতে নেতিবাচক মানসিকতার জন্ম দেয় তখন কী আমরা সেটা অনুভব করে কবিতা লিখতে বসবো—-?

মরে গেছে মানুষের অনুভূতির অণু গুলো
মরে গেছে প্রেম ও মানুষের ভিতরের মানুষ?

একটু ভেবে দেখুন তো, এই শব্দগুলোর মুখোমুখি হলেও আমরা সাথে সাথে তার প্রতিউত্তর অথবা একই রকম আন্তরিকতার ভূমিকা রাখি কিনা?

ওহ,,,তোমার এস এম এস দেখেছিলাম, বাট আই এম খুব বিজি ছিলাম_______ অথবা একটা আঙুল স্টিকার পরিচয় করিয়ে দেয় —- আমি ঠিক আন্তরিক না, মানুষের মত অতটা না।

হ্যাঁ আমি বিজি ছিলাম ____ মানুষের থেকে, মানবিক দিক থেকে, আন্তরিকতার দিক থেকে____ দূরে সরে গিয়ে অমানুষ হবার কাজে সত্যিই আমি বিজি ছিলাম। কারণ ঐ ছোট ছোট শব্দগুলোর মূল্যায়ন করার জন্য আমার যুক্তি আছে ঠিকই কিন্তু ইচ্ছে ছিল না, থাকলেও খুব কম।

 

2 Comments

COMMENTS

  1. সৌজন্যবোধ একটি অন্যতম মানবিক গুণ,যেটা সকলের মধ্যে থাকা উচিত। সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ বার্তার লেখাটি।❤️

    ReplyDelete
  2. অসংখ্য ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করার জন্য

    ReplyDelete
Previous Post Next Post

কমেন্ট